টালিগঞ্জ পাড়ায় তৃতীয় বার ছবি হচ্ছে কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দত্তা’ নিয়ে। ১০০ বছর আগে শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘দত্তা’ লিখেছিলেন। স্রষ্টার সেই সৃষ্টি দিয়েই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘দত্তা’ ছবি করছেন পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী। তাঁর ডেবিউ ছবি – প্রথম ছবি এটি। প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৭৮ সালে বাংলাতেই অজয় করের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল আরেক ‘দত্তা’। সেখানে কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনকে দেখা গিয়েছিল বিজয়ার চরিত্রে। ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শমিত ভঞ্জ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়রা।তবে
প্রায় মাস ছয়েক পর দত্তা-র ভবিষ্যত নির্ধারিত হল। বদলে গেল ছবির ‘বিলাস বিহারী’। ফিরদৌসের পরিবর্তে সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যাবে ‘দত্তা’-র বিলাস বিহারীর ভূমিকায়। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন ভারতে ছিলেন ফেরদৌস। আর সেই সময়েই রাজনৈতিক প্রচারে অংশ নেন অভিনেতা। তারপরেই বিপত্তির সূত্রপাত। কাঁটাতারের ভেদাভেদ মুছে দর্শকদের মন জয় করা অভিনেতাই বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের উৎসবে ‘প্রচার করে’ রীতিমতো বিপাকে পড়েছিলেন। এতটাই, যে তাঁর ভিসা বাতিল করে দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এবারের ‘দত্তা’-র পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন নির্মল চক্রবর্তী।আসলে, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের লেখা গল্প অবলম্বনে গত বছর এপ্রিলেই শুরু হয়েছিল ‘দত্তা’ ছবির শুটিং।কিন্তু তারপর ৬ মাসের জন্য় শুটিং স্থগিত ছিল। কিন্তু কেন, এই প্রশ্নের উত্তরেই পরিচালক জানালেন, ‘দত্তা’ ছবির নায়ক ফিরদৌসকে নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। অবশেষে , বদল হলো অভিনেতা। ‘দত্তা’ ছবিতে নরেনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন জয় সেনগুপ্ত, বিলাসের ভূমিকায় রয়েছেন সাহেব চট্টোপাধ্য়ায়।
বোলপুরে শুরু হল নির্মল চক্রবর্তীর ‘দত্তা‘ ছবির শ্যুটিং।বেলগাছিয়ার রাজবাড়ি ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার বাণতলায় আউটডোর শুটিং হয়েছে দত্তা’র। অসম্ভব সুন্দর সাজে ধরা দিলেন বিজয়া রূপী ঋতুপর্ণা। ঋতুপর্ণা সহ ছবির চরিত্র চিত্রনে পোশাক পরিকল্পনার দায়িত্বে সাবর্ণী দাস। যার পোশাকে উঠে আসছে শরৎ যুগ। রাবেন্দ্রিক ভাবে ব্রাক্ষ যুগ। নির্মল বাবুর সঙ্গে ঋতুপর্ণার ২০-২২ বছরের যোগাযোগ বন্ধুত্ব। আর পরিচালকের ভাবনাতেও ছিল ছবি করলে রবীন্দ্র সাহিত্য কিংবা শরত্ বঙ্কিম সাহিত্য নিয়ে ছবি করবেন। এ বছর ‘দত্তা’ উপন্যাসের শতবর্ষ। ঠিক একশো বছর আগেই শরত্চন্দ্র ‘দত্তা’ লেখেন। ছবিকে যতটা সম্ভব নিখুঁত করা যায় যথেষ্ট সচেষ্ট নির্মল। পুরনো কালের ফিটন গাড়ি খুঁজে বার করেছেন তিনি। তবে গাড়িটিকে ঠিকমতো জায়গায় আনতে অনেক খাটতে হয়েছে পরিচালককে।
পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী বললেন ‘আমি শরত্চন্দ্রের সাহিত্যটা নিয়ে ছবি করছি। বিজয়া, নরেন, বিলাস, নলিনী ভেবে করছি। হ্যাঁ আগেও খ্যাতনামা পরিচালকরা ‘দত্তা’ করেছেন। সেইসময়ের কাস্টিং ‘দত্তা’ করতে গেলে যাঁদের মানাবে তাঁদের তাঁরা নিয়েছেন। আমি এখানে বিজয়া যাকে মানাবে তাঁকেই নিয়েছি। সাহিত্যের চরিত্রগুলো ভেবেই কাস্টিং করেছি। এখন তো ঋতুপর্ণাকে ছাড়া কাউকে বিজয়া ভাবার কোনো জায়গা নেই। বিজয়া সেই সমাজের ব্রাহ্মসমাজের শিক্ষিতা মেয়ে, যে প্রচন্ড বুদ্ধিও ধরে, যার একটা ব্যাক্তিত্ব আছে, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দৃঢ়, আর অবশ্যই দেখতে সুন্দরী এত কিছুর কম্বিনেশান ঋতুপর্ণা ছাড়া ভাবাই যায়না কাউকে।” বাকি কাস্টিং নিয়ে পরিচালক জানালেন “নরেনের ভূমিকায় জয় সেনগুপ্ত। ফিরদৌস করছেন বিলাসের ভূমিকায়। যাদের নিয়েছি ঋতুপর্ণার বিপরীতে যারা খুব বেশী ইউজড নয়। রাসবিহারীর চরিত্রে বিশ্বজিত্ চক্রবর্তী। ফিরদৌসের চেহারার সঙ্গে ওঁর বাবা রাসবিহারী মিল লাগে এমন ভেবেই বিশ্বজিত্দাকে নেওয়া। নলিনীর ভূমিকায় দেবলীনা কুমার।”
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেছেন, ”এত বছর পর আবার দত্তা তৈরি করার খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা। সাহিত্য সবসময় আমাদের সমৃদ্ধ করে। নির্মলদাকে ধন্যবাদ বিজয়ার চরিত্রে আমায় বেছেছেন।” তিনি আরো জানান,” আমি এই ছবিটা করতাম। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ‘দত্তা’ নতুন করে কেউ বানালে সেটা আমি করব। তাই না করতে পারলাম না। আমার মনে হয় আজকের সমাজেও এই উপন্যাস সমান ভাবে জনপ্রিয়। নতুন ভাবে নিজেকে নিয়ে কাজ করতে পারবো। আশা করছি মানুষেরও ভাল লাগবে।“
এ বছরই মুক্তি পাওয়ার কথা ঋতুপর্ণার প্রযোজনা সংস্থার এই ছবি।