লকডাউনের ঘরবন্দি জীবন তাদের কাছে অসহনীয়। কিন্তু এদের যদি ঘরের মধ্যেই বেঁচে থাকার রসদ দেওয়া যায়, বোঝানো যায় জীবনের মানে, তাহলে অফুরান জীবনীশক্তি ফিরে আসে আবার। এই নিয়েই অপরাজিতা আঢ্য তৈরি করেছেন তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শামুক’ ।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য তাঁর নতুন ইউটিউব চ্যানেল এনেছেন। গত শুক্রবার বিকেলে চ্যানেলের পোস্টার লঞ্চ, অনলাইনে। লকডাউনের এই অস্থির সময়ে বেশিরভাগ সেলিব্রিটি ঘরে বসেই ক্রিয়েটিভ কাজ করছেন। অপরাজিতাও ব্যতিক্রম নন। ‘নিরন্তর অপরাজিতা’ এই নামই ঠিক করা হয়েছে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য।অফুরান অবসর। কাজ কম, বিশ্রাম বেশি। কিন্তু ধৈর্য হারাচ্ছি আমরা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। অধৈর্য হওয়া অন্যায় নয়৷ অনেক কাজের প্ল্যানিং কিন্তু সেগুলো কবে যে কার্যকরী হবে তা কেউ জানি না। কিন্তু ধৈর্যটা আমাদের ধরতেই হবে। এমনটাই মনে করেন সকলের প্রিয় অপরাজিতা আঢ্য।
শান্তশিষ্ট নিরীহ, খানিক ভীতু আপন খেয়ালে সামনে এগিয়ে যায় সে। বিপদ বুঝেই মাথা ঢুকিয়ে নেয় খোলসের মধ্যে। খোলসের বাইরের জগত আর ভিতরের জগত তার কাছে ভিন্ন হলেও সুন্দর। সে শামুক— আর তাকে নিয়েই অপরাজিতা আঢ্য বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটি শর্টফিল্ম। লকডাউনে ঘরবন্দি সকলেই হাঁপিয়ে উঠেছে। বাইরে বেরোনোর জন্য মন আনচান। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে বাচ্চা এবং টিনএজাররা। স্কুল নেই, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ নেই, আড্ডা নেই— বাড়িতে মন টিকছে না তাঁদের। হয়ে যাচ্ছে খিটখিটে, বিরক্ত।
‘ধৈর্য’ এই শব্দটা বরাবর শুনে আসলেও কাজের ক্ষেত্রে এই শব্দের প্রয়োগ খুব কমজনই করতে পারি। দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। স্তব্ধ জীবন। আমাদের অভ্যেস হঠাৎ করে বদল গিয়েছে মাস্ক আর কোয়ারানটিনে। বাড়িতে থাকা, বারবার হাত ধোওয়া, মাস্ক ছাড়া বাইরে না বেরনো এবং বাড়িতেই নিজের একটা জগৎ তৈরি করে নেওয়া। হঠাৎ করে বন্দি হয়ে অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন। সেখান থেকে বাড়ছে বিরক্তি। কিন্তু এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সকলকেই মানিয়ে নিতে হবে। আর তাই সেই উপলব্ধি থেকেই ‘শামুক’ আনলেন অপরাজিতা আঢ্য। লকডাউনে ছোট ছবি থেকে মিউজিক ভিডিয়ো তৈরি হচ্ছে অনেক কিছুই।
শামুক’ আসলে এক মা ও মেয়ের গল্প। তাদের সম্পর্কের গল্প, বোঝাপড়ার গল্প। বয়স যাদের কম, লকডাউনে বাড়িতে বসে প্রাণ হাঁফিয়ে উঠছে তাঁদের। বাড়ি থেকে এক পাও বেরনোর উপায় নেই। অতএব স্বাভাবিকভাবেই রাগ গিয়ে পড়ছে বাবা মায়ের উপর। মা যদি বলে ধৈর্য ধর, তবে অধৈর্য হয়ে পালটা উত্তর আসে, ‘ধৈর্যের ঠিক কোন দিকটা ধরতে হবে?’ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ মা। কিন্তু হাল ছাড়লে তো চলবে না। তাই মা মেয়েকে শোনায় শামুকের গল্প। বোঝানোর চেষ্টা করে, শামুকের কাছে বাইরের পৃথিবীটা যতটা সুন্দর ভিতরেরটাও তাই। বোঝানোর চেষ্টা করে ‘realization’ মানে। কী তার মানে? ছবিতে সেই রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।
নিজে ছিলেন মায়ের ভূমিকায়। এবং টেলি অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য ছিলেন মেয়ের ভূমিকায়। দুজনের মুখের আদলে রয়েছে অদ্ভুত মিল। সে অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ। তবে, নিজের বলার বিষয়টিকে খুব গুছিয়ে স্থাপন করেছেন অপরাজিতা আঢ্য। রয়েছে খুশি মনে ঘরে থাকার মন্ত্রের টিপস। শুটিং-ও হয়েছে নিজেদের ঘরে বসেই। মেয়ে যেখানে লকডাউনে অতিষ্ট হয়ে উঠছে সেখানে মা শামুকের খোলসের ভিতর এবং বাইরের জগতের তাৎপর্য বুঝিয়ে লকাডউনের গুরুত্ব বোঝালো মেয়েকে। দর্শকদের কাছেও গিয়ে পৌঁছল সেই বার্তা।বন্দিদশায় মেয়ে যখন বিরক্ত, তখন ‘মা’ অপরাজিতা কী ভাবে তাঁকে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার সহজপাঠ শেখালেন তা নিয়েই এই ছবি।
ছবির ভাবনা, পরিকল্পনা এবং চিত্রনাট্যের বিন্যাস সবই অপরাজিতার। পরিচালনা এবং সিনেমাটোফ্রাফি করেছেন অপরাজিতা আঢ্যর স্বামী অতনু হাজরা। সম্পাদনায় ঋক বসু। নিজের এই প্ল্যাটফর্মে আরও বহু কাজ নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে অভিনেত্রীর।
অপরাজিতার এই উদ্যোগে দর্শকরা আপ্লুত। লকডাউনের গুরুত্বও যে কেউ এভাবে বোঝাতে পারে তা আশা করেনি বিনোদনপ্রেমীরা। প্রসঙ্গত, লকডাউনে মধ্যে দিনের পর দিন সতর্কবার্তা জারি করে চলেছে সরকার। সতর্ক করছেন তারকারাও। বিনোদন জগতের সকলেই সতর্ক করার এই বিষয় যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। নিত্যদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জনসাধারণকে লকডাউনের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
এই লকডাউনে কিভাবে মানসিক শান্তি বজায় রাখবেন সেই অমূল্য টিপস পেতে অবশ্যই দেখবেন ‘শামুক’।