গোটা বিশ্বজুড়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা বিদেশী ভাইরাস পালটে দিয়েছে আমাদের সবার জীবনের গতিপথ। চোখের সামনে পালটে গিয়েছে চেনা শহর, চেনা অলি-গলি। এরই মাঝে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছে হাজার-হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের হাহাকার। মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছে ওরা। কোলের সন্তানকে কাঁধে চাপিয়ে, সদ্যোজাতকে তোয়ালে মুড়ে কেউ বা আবার বৃদ্ধ মা-বাবার অন্ধের যষ্ঠি হয়ে বাড়ির পথে এগোচ্ছে। ক্লান্তিতে শরীর অসাড় হলেও ওরা হেঁটেই চলেছে। মৃত্যুও কম ঘটেনি। দেশের কোনও না কোনও প্রান্তের মায়ের কোল খালি হয়েছে। সন্তান বিয়োগ কেউ বা আবার পিতৃবিয়োগে নির্জনেই অঝোরে কেঁদে চলেছেন।
সুনীল গাঙ্গুলী সেই একদিন কবিতাতে বলেছিলেন “যাদের থেকে তুমি কিছু নাও, তাদের তোমাকে কিছু দিতে হবে!” না না, দেওয়া মানেই যে মেটেরিয়ালিষ্টিক চাহিদা পূরণ করা তা কেন হবে। দেওয়া মানে তো মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, দেওয়া মানে তো সহানুভূতিশীল হওয়াও। কিন্তু আমরা ক্ষণে ক্ষণে এটা বড় ভুলে যাই। আমরা আসলে করোনা সংক্রমণের মধ্যেও দিব্বি আছি জানেন তো! আমাদের যাদের সামর্থ্য আছে পরিবারের থেকে দূরে থেকেও বাড়িতে একজন তথাকথিত কাজের লোক রাখার, তারা তো আছি মহা সুখে। জামা কাপড় কাচা থেকে রান্না করা এঁটো বাসন ধোয়া, সবটাই করছে সেই
মানুষ গুলো, যাদের কয়েকটা টাকার বিনিময়ে আমরা কিনা সব সময় একটু নিচু স্তরের লোক ভেবে থাকি। কিন্তু তাদেরও যে পরিবার আছে, তাদের সন্তানদের জন্য তারা উতলা হন, তা আমরা খুব একটা মনে রাখি না।
ওঁদের লকডাউন হয় না। রান্না করে, ঘর মুছে, ক্লান্ত শরীরে বাবুদের ছেলেমেয়েদের মুখে তুলে দিতে হয় ভাত। এগিয়ে দিতে হয় জলের গ্লাস। বাড়ি অনুযায়ী নাম বদলায় তাঁদের। কখনও তিনি গোপালের মা, কখনও আনোয়ারার বোন, আবার কখনও বা ‘কাজল মাসি’। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এই সব মানুষের কান্নাভেজা গল্প নিয়েই প্রকাশ্যে এল ‘উইন্ডোজ’-এর ১২ মিনিটের লকডাউন শর্ট ‘কাজল মাসি’।
বৃহস্পতিবার উইন্ডোজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে মুক্তি পেল ‘কাজল মাসি’। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন খেয়ালি দস্তিদার এবং ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ খ্যাত আদিত্য সেনগুপ্ত। এই প্রথম মা খেয়ালি দস্তিদারের সঙ্গে স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করলেন আদিত্য। প্রসঙ্গত, উইন্ডোজের হাত ধরেই অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন আদিত্য। এছাড়াও রয়েছেন গৌরী মুখোপাধ্যায় এবং দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়। এই নতুন শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মা ও ছেলের সম্পর্ককে। অন্যান্য শর্ট ফিল্মের মতন এই শর্ট ফিল্মটিও অভিনেতারা তাঁদের বাড়িতে বসেই শুট করেছেন।
কাজল মাসির ছেলে মুম্বইয়ে কাজ করেন। মা বারণ করেছিলেন অত দূরে কাজ করতে যেতে। কিন্তু মায়ানগরীর নেশার মোহ তিনি কাটাতে পারেননি। দেশ জুড়ে করোনা সঙ্কট যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এমন সময়েই কাজলের মোবাইলের একটি ফোন আসে। ছেলের ফোন। নিমেষে কাজলের মুখের চেহারা যায় পাল্টে। ধারাভিতে থাকা কাজলমাসির সন্তানের কাছে পয়সা আজ বাড়ন্ত। জুটছে না খাবারও। ফোন কেটে যায়।
এই ছবিতে মায়েদের কথা যাঁরা সন্তানের ভিন রাজ্য থেকে আসার অপেক্ষায় আকুল হয়ে অপেক্ষা করছেন। ভাতের থালা সামনে পেয়েও যাঁরা রোজ কেঁদে চলেছেন শুধুমাত্র এই চিন্তায় যে সন্তানের মুখে একবেলা অন্ন জুটল কিনা! দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই রয়েছেন এই ‘কাজল মাসিরা’। যাঁরা পেটের দায়ে বাবুদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিলেও নিজের সন্তানের জন্য নীরবেই কেঁদে চলেছেন।
দিশেহারা মা বুঝতে পারেন না কী করা উচিত তাঁর। নিঃশব্দেই চোখ দিয়ে গড়াতে থাকে জলের ধারা। ‘ছেলেটা আদৌ বাঁচবে তো?’ উত্তর জানা নেই। উৎকণ্ঠায় টিভির পর্দায় চোখ যেতেই মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে তাঁর। বড় বড় করে ব্রেকিং যাচ্ছে, বান্দ্রা স্টেশনে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ। “কী হবে যদি পুলিশ ছেলেটাকে মারে, খাবার খায়নি না জানি কত দিন!” মায়ের গলা দিয়ে ভাত নামতে চায় না, গলার কাছে কষ্ট গিলতে গিলতে সে কাপড় কাচে, ‘ছোড়দা’র জন্য মাছ ভাজে, কফি করে দেয়।
শেষ পর্যন্ত কাজল মাসির ওই অশেষ মাতৃত্ব কি মান পায়? কী হয়, তা বলে দিলে সাসপেন্স মাঠে মারা যাবে। তবে অসহায় কাজলের কান্নায় আপনিও যে নরম হবেন সে কথা হলফ করে বলা যায়। শেষে আবার শিবপ্রসাদের কণ্ঠে চমকও রয়েছে।জানতে হলে দেখুন উইন্ডোজ প্রোডাকশন এর নতুন লক ডাউন শর্ট ফিল্ম কাজল মাসি।