করোনার কোপের মাঝেই দুঃসংবাদ টলিপাড়ায়! করোনা ভারতে ঢোকার পর সবার আগে প্রভাব ফেলেছিল বিনোদন জগতের ওপর। প্রথম ধাপেই প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তারপরই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শ্যুটিং। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা নেমে এসেছিল বনিদোন জগদতের ওপর।
একটি শ্যুটিং-এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শতাধিক মানুষের রোজগার। মেকআপ আর্টিস্ট থেকে শুরু করে ক্যামেরার পোছনে থাকা প্রতিটা মানুষ। লকডাউনের জেরে টলিপাড়ায় বন্ধ হতে চলেছে চারটি ধারাবাহিক। বিভিন্ন সূত্র মারফত এই খবরই এখন ঘুরছে চারিদিকে। একটি বিনোদন চ্যানেলের চারটি চলতি ধারাবাহিক আর সম্প্রচারিত হবে না এমনটাই শোনা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু ঘোষণা না হলেও করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক ধাক্কাই যে এর মূল কারণ তা স্পষ্ট। বর্তমানে বিজ্ঞাপন কমে গিয়েছে সংবাদপত্রের। এরপর বিজ্ঞাপন কমার সমূহ সম্ভাবনা টেলিভিশনেও। ফলে বিজ্ঞাপন বাবদ যা আয় হতো সেই কোপ এসে পড়বে প্রযোজক, স্টুডিয়ো মালিক থেকে শুরু করে সব কলাকুশলীদের উপর।
কেউ ফুঁসছেন রাগে। কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় উগরে দিচ্ছেন ক্ষোভ। রাতারাতি অনিশ্চিত হয়ে পড়া ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় কারও রাতের ঘুম উড়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার যন্ত্রণায় ছটফট করে কেউ বা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হলেও সরাসরি মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
১৮ মার্চ থেকে বন্ধ শ্যুটিং। যদিও ১২ মে এডিটিং এর অনুমতি এলেও শ্যুটিং কবে শুরু হবে তা স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এছাড়াও শ্যুটিং ঘিরে জারি হয়েছে একাধিক সতর্কবার্তা। এই সব কিছু মেনে ফ্লোরে শ্যুটিং করা কার্যত অসম্ভব বলে জানিয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। বাড়িতে থেকে মোবাইল ফোনে শ্যুটিং করে কিংবা জনপ্রিয় পুরনো সিরিয়ালের এপিসোড দেখিয়ে কতদিনই বা চলবে।
কালার্স বাংলা চ্যানেলের চারটি ধারাবাহিক বন্ধ করে দেওয়ার আচমকা সিদ্ধান্তের খবরমঙ্গলবার দুপুর থেকে চাউর হওয়ার পর এটাই এখন বাংলার টেলিপাড়ার অন্দরেরছবি।
উল্লেখ্য গত ১২ মে থেকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শুরুর নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার মাঝেই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ওই চারটি ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত পরিচালক, প্রযোজক ও তারকাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে এই আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে আর টানা যাচ্ছে না ধারাবাহিক গুলি। যদিও লিখিত ভাবে বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দেওয়া হলেও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে সিদুরে মেঘ দেখছেন কলাকুশলীরা।
জানা গিয়েছে, কালার্স বাংলা চ্যানেল ‘নিশির ডাক’, ‘মঙ্গলচণ্ডী’, ‘কনককাঁকন’ ও ‘চিরদিনই আমি যে তোমার’ নামের চারটি ধারাবাহিক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সংক্রান্ত ইমেলও নাকি পৌঁছে গিয়েছে প্রযোজনা সংস্থাগুলির কাছে। এই ধারাবাহিকগুলির বদলে অন্য ধারাবাহিক ডাব করে দেখানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে এই পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, সম্ভবত করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতেই এমন সিদ্ধান্ত। শুটিং বন্ধ থাকায় সবক’টি বাংলা বিনোদন চ্যানেলেই মূলত পুরনো সিরিয়ালের পুনঃপ্রচার চলছে। বড়জোর মাঝেসাঝে বাড়ি থেকে মোবাইলে শুট করা এক-আধটা পর্বের দেখা মিলছে। ফলে আয়ের ভাঁড়ারে টান পড়েছে সেই মার্চ থেকেই। পাশাপাশি, ডাবিং করা সিরিয়ালও এই বেসরকারি চ্যানেলে আগে থেকেই চলে বলে দাবি। ফলে ডাবিং করা ধারাবাহিকের বিষয়টা নতুন কিছু নয়। এটাও জানা গিয়েছে, ওই চ্যানেলের সঙ্গে এই সব ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সরাসরি কোনও চুক্তি নেই। বরং তাঁরা প্রযোজনা সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে ভয় বাড়ছে টেলিপাড়ায়।
ধারাবাহিক বন্ধের খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই আশঙ্কায় অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ানরা। কারণ, অন্য চ্যানেলগুলিও যদি এই পথে যায়, তাহলে সমস্যা গুরুতর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সবথেকে খারাপ অবস্থা টেকনিশিয়ানদের। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাও ভাল রোজগার করেন, কিন্তু টেকনিশিয়ানদের প্রাপ্য নিয়ে সমস্যা আজকের নয়। মাঝেমধ্যেই টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তাঁরা।
আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “ডাবিং আটকানোর কোনও নীতিগত উপায় নেই আমাদের। কারণ এটা সুপ্রিম কোর্টের রুলিং। একটাই পথ হয়তো হতে পারে, নতুন কোনও ধারাবাহিক হলে প্রতিবাদে কেউ তাতে যোগ দিল না। তবে লকডাউনের ফলে আমাদেরও হাত-পা বাঁধা। এ বিষয়ে সকলে মিলে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলে হয়তো বলতে পারব, ওই চ্যানেলের এই আচরণের প্রতিবাদে আমরা কী করছি।”