আজ পরিবেশ ‘ঋতু’হীন! আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে, বৃষ্টিভেজা সকালে হঠাৎ দমকা হওয়ার মত এসেছিল খবরটা। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছিল শুনে। হঠাৎ করে চলে গেল, আগের রাতেই তো সব স্বাভাবিক ছিল। না কোনও অসুস্থতা, না কোনও কোনও ব্যাধি। মানুষের মৃত্যু, চরম সত্য, কিন্তু আজও মেনে নিতে কষ্ট হয়। ঋতুপর্ণ ঘোষের অনুপস্থিতি আজও কুঁড়ে কুঁড়ে খায় অসংখ্য মানুষকে। ঠিক যেমন ইরফান খানের চলে যাওয়ায় চোখের জল ফেলেছিল হাজারও ভক্ত, তেমনই ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যুও মেনে নিতে বুকটা ভারি হয়ে আসছিল।
অমল সারেনি আজও। রোজ ফুল রেখে যায় সুধা।অসুখ করেছে খুব। তুমি চিঠি দেবে না, ঋতুদা?
Posted by Srijato Bandyopadhyay on Saturday, 30 May 2020
আজকের দিনটি ঠিক মনে করিয়ে দিল ভারতীয় সিনেমার এক ক্ষণজন্মা প্রতিভাকে। তিনি আর কেউ নন, ঋতুপর্ণ ঘোষ। এই দিনেই তিনি আচমকা চলে গিয়েছিলেন সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। অসময়ের এমন মৃত্যু এখনও কেমন যেন অবিশ্বাস্য মনে হয়। ঋতুপর্ণর ছবি মানেই যেন ছিল টানটান চিত্রনাট্য, সাবলীল অভিনয়ের এক টাটকা বাতাস। এখনও ঋতুপর্ণর লেখাগুলো পড়লে বোঝা যায় যে তাঁর মধ্যে মননশীলতা ও সংবেদনশীলতার কী চমৎকার সহাবস্থান ছিল। এই দিনটিকে স্মরণ করেই আজ লোপামুদ্রা প্রোডাকশনস-এর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেল ‘ঋতুপর্ণর শ্রুতিসৃষ্টি’। কবি শ্রীজাত-র লেখা ‘৩০ কে’ শীর্ষক কবিতাটি পাঠ করেছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তার অনুষঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘বন্ধু রহো রহো সাথে’ গাইলেন লোপামুদ্রা মিত্র। সঙ্গীতায়োজনে জয় সরকার।
মানুষ প্রিয়জনের মৃত্যুতে তাঁকে স্মৃতির অতলে লুকিয়ে রাখে, কিন্তু ভুলতে পারে না, চায় না। ঠিক যেমনটা প্রসেনজিৎ পারেননি। ঋতুপর্ণ ঘোষের অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। তাই বলে কি বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায়! এদিন সেই প্রাণের বন্ধুকে স্মরণ করেই অবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন বুম্বা। সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে তাঁর ঋতু কথা। সালটা ১৯৯৪। ছক বাঁধা গত ভাঙলেন ঋতুপর্ণ। তৈরি হল ‘উনিশে এপ্রিল’। নতুন করে বাঙালি চিনল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
৩০ মে সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকীতে কিংবদন্তি পরিচালককে স্মরণ করেছেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়। বন্ধুকে স্মরণ করে তিনি লিখেছেন, ”আজ ৭ বছর হয়ে গেলো তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেছিস। আজও প্রত্যেক মূহুর্তে মনে পড়ে তোকে। কত স্মৃতি, কত না বলা অভিমান, কত অসম্পূর্ণ কাজ।তোর হাত ধরেই তো মানুষ আমায় নতুন করে চিনলো।তুই তো আমার অনিয়মের ঋতু, নিয়মের ঋতু…যেখানে থাকিস ভালো থাকিস বন্ধু। ”
উনেশে এপ্রিলের সুবাদেই বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়েছিল প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণ ঘোষের। অপর্ণা সেন, দেবশ্রী রায় অভিনীত মা-মেয়ের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠা এই ছবিতে উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করেন বুম্বাদা। বাঙালির চেনা পরিচিত সুপারস্টারকে অন্যরকম চরিত্রে খুঁজে পাওয়ার সেই শুরু। সমালোচকদের মতে, অভিনেতা প্রসেনজিতের উত্তরণের যাত্রাপথটা অনেকাংশেই ঋতুপর্ণ কেন্দ্রিক। সেই কথা বারবার মেনে নিয়েছেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ও। উনেশ এপ্রিল ছাড়াও ঋতুপর্ণ ঘোষের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি- উত্সব, চোখের বালি, দোসর, খেলা, সব চরিত্র কাল্পনিক, নৌকাডুবি। বলা যায় চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় একে অপরের ‘দোসর’ প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণ।
প্রিয় পরিচালককে স্মরণ করে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত লিখেছেন, ”মন ভার হয়ে আসা একটা দিন, আজ আবার ৩০শে মে। ঋতু দার চলে যাওয়া আমাদের ছেড়ে শত আলোকবর্ষ দূরে তারাদের দেশে। তোমার অসম্পূর্ণতা চিরজীবন অনুভব করবো, তুমি ভালো থেকো যেখানেই থেকো।”
দেব-এর প্রযোজনা সংস্থার তরফে ঋতুপর্ণ ঘোষকে স্মরণ করে টুইটারে লেখা হয়েছে, ”কিংবদন্তি পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী। আমরা ওনাকে একটু বেশি তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলেছি। ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়ায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
প্রিয় পরিচালকের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে যীশু সেনগুপ্ত লিখেছেন, ”ভালো থেকো, আদর।”
এভাবেই গোটা টলিউড ঋতু কে স্মরণ করেছে।